শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ফোর্বসের তালিকায় ৯ বাংলাদেশি বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা একসময় বিশ্বে রোল মডেল হবে চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ কোরবানির পশু বেশি আছে : মন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপির সর্বোচ্চ ৩৮৮০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে এলজিইডি বিদেশী সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দুবাইয়ে বিদেশীদের গোপন সম্পদের পাহাড়, তালিকায় ৩৯৪ বাংলাদেশীও সেলিম প্রধানকে জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিলের নির্দেশ বহাল ফের আটকে গেলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অর্থ ছাড় উপজেলা নির্বাচন জনগণের সাথে প্রতারণা করার নির্বাচন : রিজভী মালয়েশিয়ার হুমকি : হামাস নেতাদের সাথে আনোয়ারের ছবি ফেরাল ফেসবুক
নিবন্ধন না নিলে ২৬ হাজার কেজি স্কুল বন্ধের হুঁশিয়ারি

নিবন্ধন না নিলে ২৬ হাজার কেজি স্কুল বন্ধের হুঁশিয়ারি

স্বদেশ ডেস্ক:

আগামী তিন মাসের মধ্যে সরকারের দেয়া শর্ত মেনে নিবন্ধন না নিলে ২৬ হাজার বেসরকারি বা কেজি স্কুল বন্ধ করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। যদিও এর আগে কয়েক দফায় এ বিষয়ে বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোকে সতর্ক করা হলেও কঠিন এবং কিছু অবাস্তব শর্তের কারণে নিবন্ধন নিতে পারেনি অনেক স্কুল। তাই এবার তিন মাসের সময় বেঁধে দিয়ে স্কুল বন্ধ করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ এমন তথ্যই জানিয়েছেন।

সূত্র মতে, সর্বশেষ জরিপের তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ২৬ হাজার ৪৬৮টি কিন্ডারগার্টের স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে নিবন্ধনের আওতায় রয়েছে মাত্র ৩২৭টি। আর নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা আছে ১০ হাজার স্কুলের। বাকি স্কুলগুলো নিবন্ধনের আবেদনই করেনি। তাই আগের আবেদন করা স্কুলগুলোকে পুনরায় আবেদন করতে হবে নাকি আগের আবেদনপত্রই বিবেচনায় নেয়া হবে সে বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। তাই নতুন করে নিবন্ধনের শর্ত দেয়ায় এখন ২৬ হাজার স্কুলই বন্ধ হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা ব্যক্তি মালিকাধীন কিন্ডারগার্টেন (কেজি স্কুল) নিয়ন্ত্রণে নতুন বিধিমালা তৈরি করছে সরকার। এই বিধিমালার আওতায় বেসরকারি সব স্কুলেরই নিবন্ধন নিতে হবে। যদিও স্কুলের মালিক পক্ষ বলছেন, নতুন এই বিধিমালা বা নিয়মনীতির আড়ালে মূলত কেজি স্কুলগুলো নিয়ন্ত্রণে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে সরকারি খড়গ। আর সরকার বলছে দেশের সব কেজি স্কুল একটি কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য এই বিধিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। কিন্তু মালিকপক্ষ বলছে, এখানে অনেক শর্তই কঠিন করা হয়েছে। তাই তারা বেশ কিছু বিষয়ে সংশোধনীরও দাবি জানিয়েছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান মালিকের দাবিÑ সরকারের এই উদ্যোগ সফল করতে হলে অর্থাৎ কেজি স্কুলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনার জন্য আলাদা একটা অধিদফতর অথবা অধিদফতরের আলাদা একটা বিভাগ করা হোক।

এ দিকে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ ফরিদ আহাম্মদ জানিয়েছেন, আমরা অনেক সময় দিয়েছি। এখন থেকে নিবন্ধন ও একাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়া কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় (বেসরকারি) চলবে না। সচিব আরো বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হবে। এখন যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে সেগুলোকেও নিবন্ধন নিতে হবে। গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সচিব বলেন, বর্তমানে যে স্কুলগুলো আছে তার মাত্র ১০ শতাংশ নিবন্ধিত। বাকি ৯০ শতাংশ অনিবন্ধিত। অনিবন্ধিত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন নেয়ার জন্য তিন মাস সময় দেয়া হবে। জানা যায় কেজি স্কুলগুলো নিয়ন্ত্রণে একটি বিধিমালা প্রণয়নের কাজ প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। সেই বিধিমালার আলোকে ১৯৮৯ সালে এরশাদ সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন এলাকার ২০০ কেজি স্কুল নিবন্ধনও পেয়েছিল। ১৯৯১ সালে সেই বিধিমালা পুরোটাই বাতিল করা হয়। এর পর দীর্ঘ ২০ বছর এ বিষয়ে আর কোনো নতুন বিধিমালা হয়নি। ২০১১ সালে আবারো নতুন বিধিমালার আওতায় কেজি স্কুলগুলো নিবন্ধনের জন্য নির্দেশনা জারি করা হয়। তবে বেশ কিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সেই নিবন্ধন প্রক্রিয়াতেও নানা ধরনের ত্রুটি ধরা পড়ে। ফলে আটকে যায় নিবন্ধনের কাজ। তবে বর্তমানে নতুন করে আবারো কেজি স্কুলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে বিধিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। এখন থেকে অনুমতি ছাড়া বেসরকারি বিদ্যালয় তথা কোনো কেজি স্কুল আর পরিচালনা করা যাবে না। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা যাবে না ইচ্ছেমতো ফি। খাত ও ফি’র হার থাকবে নির্দিষ্ট। দেশে এখন চালু থাকা ২৬ হাজারের বেশি কেজি স্কুলের প্রত্যেকটিকেই নিতে হবে নিবন্ধন।

নিবন্ধন ছাড়া ভবিষ্যতে কোনো প্রতিষ্ঠানও পূর্ব অনুমোদন ছাড়া পরিচালনা করা যাবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের মহাসচিব মো: মিজানুর রহমান সরকার নয়া দিগন্তকে জানান, আমরাও প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের পক্ষে। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের দাবি হলো যেসব শর্তের আলোকে নিবন্ধনের কথা বলা হয়েছে সেখানে কিছু বিষয় কঠিন ও অবাস্তব। আমরা এই কঠিন ও অবাস্তব শর্তগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি। বিশেষ করে মালিকপক্ষ থেকে বিধিমালায় পাঁচটি শর্ত সহজ করার জন্য জোর দাবি জানানো হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যালয়ের জন্য ব্যবহৃত ভূমির পরিমাণ ৮ শতক, ১২ শতক এবং ৩০ শতকের পরিবর্তে পাঁচ শতক অথবা তিন হাজার বর্গফুট ভবনের বাড়ি ভাড়া নেয়ার বিধান রাখা। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাখার পরিবর্তে সরকারি কর্মচারী অথবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী রাখা। নিবন্ধন ফি কমানো। সংরক্ষিত তহবিলে ১ লাখ, ৭৫ হাজার এবং ৫০ হাজার টাকা রাখার বিধান করা হয়েছে। আমরা এই টাকা কমিয়ে ২০১১ বিধিমালায় উল্লিখিত টাকার পরিমাণ রাখার দাবি জানাচ্ছি। এ ছাড়া ব্যক্তি নামে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সংরক্ষিত তহবিলে ৫ লাখ টাকার বিধান রাখা হয়েছে। এটাও কমিয়ে ৩ লাখ টাকা রাখার দাবি জানাচ্ছি।

সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত নতুন বিধিমালার আওতায় পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানকারী নার্সারি, কেজি ও প্রিপারেটরি স্কুল এবং অন্যান্য বেসরকারি বিদ্যালয় পরিচালনা করতে হবে। উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তার (টিইও) মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদন ফি মেট্রোপলিটন ও অন্য বিভাগীয় শহরে পাঁচ হাজার, জেলায় তিন হাজার, উপজেলায় দুই হাজার টাকা জমা দিতে হবে। তিনি যাচাই শেষে তা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার (ডিপিইও) কাছে পাঠাবেন। তিনিই প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা চলমান প্রতিষ্ঠান চালু রাখার চূড়ান্ত অনুমতি দেবেন।

আবেদন করার ৬০ দিনের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করে অনুমোদন বা বাতিল করতে হবে। প্রাথমিক অনুমতির মেয়াদ হবে সনদ দেয়ার পর থেকে এক বছর। এই মেয়াদ শেষ হলে নবায়নের আবেদন ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। আর পূর্ব তদন্ত ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান নবায়ন করা যাবে না। নতুন বিধিমালার আওতায় প্রাথমিক অনুমোদনের পর নিতে হবে নিবন্ধন। শহরাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত স্কুল নিবন্ধন ফি ১৫ হাজার টাকা। জেলায় ১০ হাজার এবং উপজেলায় ৮ হাজার টাকা। নিবন্ধন দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ভর্তি, উপস্থিতি এবং শিক্ষা সমাপনের হার বিবেচনায় নেয়া হবে। অনুমোদন বা অনুমতি কর্তৃপক্ষ ডিপিইও হলেও নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ হবেন বিভাগীয় উপ-পরিচালক (ডিডি)। নিবন্ধনের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। নিবন্ধন সনদে নানা শর্ত উল্লেখ থাকবে। পাঠদান অনুমতি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে নিবন্ধন না নিলে অনুমতি বাতিল হয়ে যাবে। নিবন্ধন সনদ প্রতিষ্ঠানকে সংরক্ষণ করতে হবে।

 

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877